সাক্ষাৎকার
কলমে
সংযুক্তা

একটা পত্রিকার সাংবাদিক হিসাবে চাকরী করছি ঠিকই কিন্তু বেশ টলোমলো অবস্থা। একেই মনটা ভালো নেই তার ওপর আজ বিজয়া দশমী। যদিও আজ সব ঠাকুরের বিসর্জন নয়, ছোটখাটো কয়েকটার বিসর্জন। বাকি সবাই যাবে কার্নিভালে।
অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় দুটো।  হঠাৎ জোর বৃষ্টি নামায় বাইকটাকে একটা প্যান্ডেলের পাশে রেখে সেখানে ঢুকে পড়লাম।  মার আসন ফাঁকা কিন্তু একটা লোক সেই আসনের সামনে বসে  নেশা করছে মানে ভাঙের সরবত খাচ্ছে।খুব রাগ হলো। বললাম, মশাইয়ের কি আক্কেল নেই, এটা দূর্গার আসন!
লোকটা - জানি বাবা, এটা আমার বৌয়ের আসন।

আমি - মানে,কি বলছেন কি,  কে আপনি?

লোকটা - উমাপতি গো, তোমাদের শিবঠাকুর।

এবার জটাধারীকে ভালো করে দেখলাম।  আরে সত্যিই তো শিবঠাকুরের মতই লাগছে দেখতে।
আমি তো হাতে চাঁদ পেলাম মনে হচ্ছে।বললাম, মহাদেব আপনার একটা সাক্ষাৎকার নিতে চাই।

মহাদেব - সেটা কি জিনিস?

আমি - না স্যর, না মানে না বাবা, মানে আমি বলতে চাইছি আমি সামান্য কিছু প্রশ্ন করবো আর আপনি উত্তর দেবেন, ব্যস।

মহাদেব - প্রশ্ন করবে না বর চাইবে?  একটার বেশী হবে না।  আর যদি শুধু প্রশ্ন হয় তাহলে তোমার কি জানার আছে বলো।

আমি - বাবা, আমার প্রথম প্রশ্ন - সবাই জানে আপনি বাঘছাল পড়ে থাকেন।  কিন্তু আজ আপনি সাদা কাপড় পড়েছেন - কেন?

মহাদেব - আমাকে তোমরা যতই পাগল বলে প্রচার কর আমি জানি আমি পাগল নই। বাঘছাল পড়লে বনমন্ত্রী বাঘ মারার অপরাধে আমাকে জেলে পুরে দেবে। তখন আর আমি পাগল, আমার ভক্তরা  আমায় পাগল বাবা ডাকে, এসব কথা কেউ শুনবে নাগো।

আমি - তা ঠিকই বলেছেন, আচ্ছা, আজ তো বিসর্জন শুরু হয়ে গেছে। আপনি তাহলে কৈলাশ না গিয়ে এখানে বসে আছেন কেন বাবা?

মহাদেব - কি করবো বলো, উমা আমাদের নিয়ে পূজোর কয়দিন এসব ছোট ছোট প্যান্ডেলেই থাকে প্রতিবার। কারণ এরা ভক্তি নিয়ে পূজাআচ্চা করে কিন্তু চারদিনের দিন সকালবেলায় চলে যায় অনেক বড় পূজা মন্ডপে। তা, আজ সকালে যখন গেল তখন আমার আর নন্দী ভৃঙ্গীর তো ঘুম ভাঙেনি তাই আমরা জানতে পারি নি এবার কোন প্যান্ডেলে গেছে।ঐদুটোকে পাঠিয়েছি খোঁজ করতে।

আমি - সেকি, সেই সকাল থেকে খুঁজে এখনো পাওয়া গেল না?

মহাদেব - আরে আমি তো ঘুম থেকে উঠলাম বারোটার সময়। তখন এখানে কেউ ছিল না, বেশ নিরিবিলি জায়গা এটা। তা, আমি তো একটু ভাঙ খেয়ে ঘুমাই নইলে আবার বার বার উঠতে হয়, ঘুম ভালো না হলে।

আমি - কেন বাবা, আপনি বারে বারে ওঠেন কেন, আপনার সংসারের সব দেখে রাখার জন্য?

মহাদেব - আরে ধূর,  আমার প্রস্টেট অপারেশন হয়েছে না, তাই একটু বাথরুমে বেশী যেতে হয় জেগে থাকলে। আর ভাঙ খেয়ে নিলে ঘুমের মধ্যেই সেরে ফেলি, টের পাই না। সকালে দেরীতে উঠি, ততক্ষণে শুকিয়ে যায় বিছানা,উমা টের পায় না।

আমি - বাবা, এবার একটু অন্য কথা জানতে চাই।
বলছিলাম কি, ভারত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক - সব দিকেই খুব খারাপ কন্ডিশনে আছে।আপনি একটা পথ বলে দিন না, যাতে ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন পায়।

মহাদেব - ওরে পাগলা, তুই কি কিছুই দেখতে পাস না?  যেখানে কেজি কেজি সোনা দিয়ে উমাকে গড়া হয়, যেখানে হীরা জহরতের গয়না দিয়ে উমাকে মুড়ে দেওয়া হয় - সেখানকার অর্থনৈতিক অবস্থাকে যদি তুই খারাপ ভাবিস তাহলে ভালো কাকে বলবি - যখন সব মানুষ সোনার তৈরী কমোড ব্যবহার করবে?
আর রাজনৈতিক কি বলছিলি?  আমি তো দেখি আগে পুজো ছিল পাড়ার ছেলেদের পুজো আর এখন তো নেতামন্ত্রীদেরই পুজো। সাহিত্যিক, গায়ক, গায়িকা বা কোনো শিল্পীকে দিয়ে পুজোর উদ্বোধন করানোর কথা এখন আর কেউ ভাবে না, সব নেতা নেত্রীদের কাজ এখন এসব।
আরেকটা কি বললি যেন,ও হ্যাঁ, সামাজিক, হা হা হা। সমাজ বদ্ধ জীব কৈ রে এখন!!  পিঁপড়েকে দেখে শেখা উচিৎ মানুষদের।

আমি - তা আপনি যা বললেন তা তো খুবই ঠিক কথা। আচ্ছা বাবা, আপনার চেলারা তো এলো না, আপনি এখন কি করবেন?

মহাদেব - ফিরবে ফিরবে, আসলে আজ চারিদিকে বিসর্জন হচ্ছে তো তাই ভাঙের সরবতও চালাচ্ছে দুই মূর্তি। জানে আজ ওরা স্বাধীন,  উমা আজ বড় জায়গায় গিয়ে ছেলেমেয়ে সামলাতে ব্যস্ত।ওর এই কয়দিন আর আমাদের কথা ভাবার সময় নেই।

আমি - কেন বাবা, বড় জায়গায়ও তো পূজা শেষ, তাহলে ব্যস্ত কেন মা?

মহাদেব - আরে কোথাও সোনার অঙ্গ তো কোথাও হিরের চমক, ছেলেমেয়েগুলোর যদি মতিভ্রম হয় এসব দেখে!  তাই ওদের সামলে রাখে - মা তো।

আমি - বাবা, এবার শেষ প্রশ্নটা ঠিক প্রশ্ন নয় আমার ইচ্ছে। যদি অনুমতি দেন তাহলে বলি।

মহাদেব - বল বল কি তোর ইচ্ছে।

আমি - বাবা জীবনেও ভাবি নি আপনার দেখা পাব কোনোদিন। সেটা যখন পেলাম বাবা তখন একবার মাকে দর্শন করার বড় শখ হয়ে গেল মনে।  হবে তো বাবা আমার সাধ পূরণ?

মহাদেব - আরিব্বাস তোর তো হেব্বি ইচ্ছে রে। রাসমনি সিরিয়ালটা খুব দেখিস, তাই না?  আরে অত ঘনঘন আমার বৌকে আমিই দেখতে পাই না এক জায়গায় বাস করেও আর মর্ত্যের মানুষগুলো পায় কি করে আমি তো বুঝতেই পারি না।

আমি - না বাবা রাণী রাসমনি তো আলাদা মাপের মানুষ, স্বয়ং রামকৃষ্ণদেব কে দেখেছেন , আমি ওনাকে দেখে বলি নি। আসলে একজন সেদিন বলছিলেন মায়ের নাকি এবার হীরার গয়না পড়ার শখ হয়েছে তাই ওনারা মাকে হীরার গয়না পড়াচ্ছেন। তাই মনে হলো মা যদি ওনাদের দর্শন দিয়ে নিজের শখের কথা বলে থাকেন তাহলে হয়ত আপনি বললে আমাকেও একবার দেখা দেবেন।

মহাদেব - হা হা হা, ওরে আমার প্রিয়া স্বয়ং অন্নপূর্ণা,ও চায় না দেয়, আমিও ওর কাছেই হাত পাতি রে মূর্খ। আর ওর শখ যদি হয় তাহলে ও সেকথা আমাকেই বলবে, সন্তানদের ব্যস্ত করবে না।
যা যা বাড়ী যা সবাই। নিজের বাড়ীর দুর্গাদের যত্নে রাখ আর নরনারায়ণ সেবাতে মন দে যদি সত্যিই উমার আশীর্বাদ চাস।

আমি - বাবা, আপনি আমার চোখ খুলে দিলেন বাবা।আপনি আমার প্রণাম নেবেন আর আমার জগৎজননীকে আমার প্রণাম জানাবেন। ভালোভাবে কৈলাশে ফিরে যান আপনারা। আর বাবা সামনের বছরের জন্য আগাম আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলাম। যতই হোক আপনি তো এধরনীর জামাই। প্রণাম

Comments

Popular posts from this blog

ভালোবাসা তো এসেই যায়