সে ও আমি
সংযুক্তা
অফিসের কাজে আজ সকালে হাজির হয়েছি পানাগড়ে। আমি একটা কোম্পানির সুপারভাইজারের কাজ করি। ফলে মাঝে মাঝেই এদিক ওদিক দৌড়াতে হয়। বেশ জায়গাটা, আমি এই প্রথম এলাম এখানে। থাকার জন্য হোমস্টের ব্যবস্থা করে দিয়েছে রামদীন,এখানকার অফিসের পিওন।
সকাল থেকেই আকাশে মেঘ ছিল, বেলা বাড়তেই শুরু হল টিপটিপ। রাস্তার ইলেক্ট্রিকের কাজ, সেটা বন্ধ রাখা হলো, বুঝলাম কালকেও শেষ হবে না। একরাশ বিরক্তি নিয়ে রামদীনের সাথে থাকার জায়গায় চলে এলাম। এটা মনে হয় রামদীনেরই সাজানো বাড়ী কারণ উঠান পার করেই ছোট একটা ঘরে রামদীন পরিবার নিয়ে থাকে দেখলাম। ছোট বারান্দায় দাঁড়িয়ে চারিদিকের সর্ষেখেত ও সবুজের সমারোহ দেখতে দেখতে বিরক্তিটা চলে গেল।রামদীন একটা পটে করে মালাই চা আর কিছু পকোড়া দিয়ে গেল।তারপরই বৃষ্টিটা বেশ ভালোমত নামলো। গলা চড়িয়ে বললাম রামদীন, রাতে খিচুড়ি ডিমভাজা খাব কিন্তু। বলেই মনে হল আমার ঘর থেকে একটা রিনরিনে গলায় কেউ হেসে উঠলো। আশ্চর্য্য, কে রে বাবা আমার ঘরে!
উঠে ঘরে গিয়ে লাইটটা জ্বালালাম, না কেউ নেই।
ফিরে এসে বারান্দা থেকে চা পকোড়ার ট্রেটা নিয়ে ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম।হাড় কাঁপানো শীতে বাইরে থাকা মুস্কিল। টিভিতে সবসময় দেখি পানাগড়ে খুব ঠান্ডা পড়ে, এই শীতকালীনবৃষ্টির রাতে সেটা বেশ মালুম হচ্ছে। মোবাইলে টুকটাক কাজ করছি হঠাৎ মনে হল ঘরে কেউ হাঁটছে।চোখ তুলে কাউকেই দেখলাম না। ঝুপ করে লাইটটা চলে গেল, বুকের ভেতর থেকে কেমন যেন একটা ভয় ভয় ভাব জেগে উঠল। মোবাইলটর্চটা জ্বেলে রামদীনকে ডাকতে দরজাটা খুলতেই একটা প্রবল ঠান্ডা হাওয়ায় মনে হল আমি বুঝি সান্দাকফুর বরফের মাঝে চলে এসেছি। গুলি মারো রামদীনকে ডাকাডাকির, আগে দরজা আটকালাম।থরথর করে কাঁপছি, দেখি কে যেন আমার গায়ে কম্বলটা চাপিয়ে দিল।আমি বুঝলাম রামদীন এসেছে। বললাম, রামদীন একটা আলোর ব্যবস্থা করো, এত অন্ধকার যে আমি তোমাকেও দেখতে পাচ্ছি না। আমার কথা শেষ হওয়া মাত্র একটি সুরেলা কন্ঠের হাসি শুনতে পেলাম ঘরে। এবার আমি বেশ বুঝতে পারলাম আমার আগেই এঘরে কেউ আছে, যার হাসির শব্দ আমি বাইরে বসেও পেয়েছিলাম। বললাম- কে আপনি, এঘরটা আমি ভাড়া নিয়েছি আজ, আপনি কিভাবে এঘরে এলেন?
মেয়েলি কন্ঠ এবার আমায় যা বলল তা শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। মেয়েটি বলল, আমার নাম মৌসম। রামদীনকাকা লোকটা ভাল না। একবার কাকী দেশে গিয়েছিল। তখন রামদীনকাকা আমাকে এই বাড়ীতে রেপ করে মেরে পেছনের জঙ্গলে পুঁতে দেয়।তারপর থেকে আমি এখানেই থাকি। খুব ইচ্ছে করে কাকাকে মেরে ফেলতে। কিন্তু আমি সেটা করতে পারি না কারণ দেহধারণ করা খুব মুস্কিল আর মানুষ মারা আরো কঠিন।কিন্তু আমি এখন একজনকে ভালোবাসি। সে বলেছে আজ রাতেই ও কাকাকে শেষ করে দেবে। তারপর আমরা দুজন এখান থেকে চলে যাব অন্য কোনো খানে।
এতবড় একটা ভুতুড়ে গল্প শুনে আমি বুঝতেই পারছিলাম না এটা কি হচ্ছে আমার সাথে।আলো তখনো আসে নি। আমি বললাম, তুমি আজ রামদীনকে মেরে ফেললে দোষটা তো আমার ঘাড়ে এসে পড়বে। তুমি তোমার প্রেমিককে বলো দুদিন পর এসব করতে। এমন সময় ঘরের মধ্যে ভয়ংকর রকমের ঠান্ডা হাওয়া বইতে লাগলো। আমি খাটের উপর কম্বল মুড়ি দিয়েও ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলাম। একটা পুরুষ কন্ঠ এবার কথা বলে উঠল।
ছেলেটি প্রথমেই বলল, আমি মৌসমের বন্ধু। আপনি যদি কথা দেন যে আপনি কোনো পীরবাবার কাছে গিয়ে আমাদের আত্মার শান্তি লাভের ব্যবস্থা করবেন তাহলে আমিও আপনাকে কথা দেব যে আজ নয় আপনি চলে গেলেই শয়তান রামদীনকে শেষ করব। আমি কাঁপতে কাঁপতেই রাজী হয়ে গেলাম। ঘরের আলোটা জ্বলে উঠল আর শীতল বাতাসটাও স্বাভাবিক ঠান্ডায় ফিরে এল। একটু পরে দরজায় শব্দ শুনে দরজা খুলে দেখি রামদীন খিচুড়ি নিয়ে এসেছে। ঘরে আমার বৌ মেয়েকে রেখে এসেছি। রামদীনের দিকে তাকিয়ে রাগে ঘেন্নায় শরীরটা কেঁপে উঠল।নিজেকে কন্ট্রোল করে বললাম, খাব না কিছু, শরীরটা ভাল নেই, তুমি চলে যাও। চলে গেল রামদীন। দরজাটা বন্ধ করে জল খেয়ে নিলাম। গলায় শব্দ করে বললাম, মৌসম, আমি কাল ভোরেই এখান থেকে চলে যাব। তারপর পীরবাবার সন্ধান করে তোমাদের মুক্তির ব্যবস্থা করব। যে লোকটা তোমার জীবন নিয়ে খেলেছে তার হাতে আমি খেতে পারবো না। মৌসম তখন বলল, আপনার কথা শুনে খুব ভাল লাগল।আমার নাম মৌসম বানু আর আমার বন্ধুর নাম পারভেজ। আপনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব।আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন, ভয় নেই আমরা চট করে মানুষের অনিষ্ট করি না। ভালো থাকবেন। ভালোবাসা যেমন মানুষকে বাঁচতে সাহায্য করে তেমনি আপনার ভালোবাসা হয়ত আমাদের মুক্তির পথ হবে।ঘুমিয়ে পড়ুন আপনি নিশ্চিন্তে।
সংযুক্তা
অফিসের কাজে আজ সকালে হাজির হয়েছি পানাগড়ে। আমি একটা কোম্পানির সুপারভাইজারের কাজ করি। ফলে মাঝে মাঝেই এদিক ওদিক দৌড়াতে হয়। বেশ জায়গাটা, আমি এই প্রথম এলাম এখানে। থাকার জন্য হোমস্টের ব্যবস্থা করে দিয়েছে রামদীন,এখানকার অফিসের পিওন।
সকাল থেকেই আকাশে মেঘ ছিল, বেলা বাড়তেই শুরু হল টিপটিপ। রাস্তার ইলেক্ট্রিকের কাজ, সেটা বন্ধ রাখা হলো, বুঝলাম কালকেও শেষ হবে না। একরাশ বিরক্তি নিয়ে রামদীনের সাথে থাকার জায়গায় চলে এলাম। এটা মনে হয় রামদীনেরই সাজানো বাড়ী কারণ উঠান পার করেই ছোট একটা ঘরে রামদীন পরিবার নিয়ে থাকে দেখলাম। ছোট বারান্দায় দাঁড়িয়ে চারিদিকের সর্ষেখেত ও সবুজের সমারোহ দেখতে দেখতে বিরক্তিটা চলে গেল।রামদীন একটা পটে করে মালাই চা আর কিছু পকোড়া দিয়ে গেল।তারপরই বৃষ্টিটা বেশ ভালোমত নামলো। গলা চড়িয়ে বললাম রামদীন, রাতে খিচুড়ি ডিমভাজা খাব কিন্তু। বলেই মনে হল আমার ঘর থেকে একটা রিনরিনে গলায় কেউ হেসে উঠলো। আশ্চর্য্য, কে রে বাবা আমার ঘরে!
উঠে ঘরে গিয়ে লাইটটা জ্বালালাম, না কেউ নেই।
ফিরে এসে বারান্দা থেকে চা পকোড়ার ট্রেটা নিয়ে ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম।হাড় কাঁপানো শীতে বাইরে থাকা মুস্কিল। টিভিতে সবসময় দেখি পানাগড়ে খুব ঠান্ডা পড়ে, এই শীতকালীনবৃষ্টির রাতে সেটা বেশ মালুম হচ্ছে। মোবাইলে টুকটাক কাজ করছি হঠাৎ মনে হল ঘরে কেউ হাঁটছে।চোখ তুলে কাউকেই দেখলাম না। ঝুপ করে লাইটটা চলে গেল, বুকের ভেতর থেকে কেমন যেন একটা ভয় ভয় ভাব জেগে উঠল। মোবাইলটর্চটা জ্বেলে রামদীনকে ডাকতে দরজাটা খুলতেই একটা প্রবল ঠান্ডা হাওয়ায় মনে হল আমি বুঝি সান্দাকফুর বরফের মাঝে চলে এসেছি। গুলি মারো রামদীনকে ডাকাডাকির, আগে দরজা আটকালাম।থরথর করে কাঁপছি, দেখি কে যেন আমার গায়ে কম্বলটা চাপিয়ে দিল।আমি বুঝলাম রামদীন এসেছে। বললাম, রামদীন একটা আলোর ব্যবস্থা করো, এত অন্ধকার যে আমি তোমাকেও দেখতে পাচ্ছি না। আমার কথা শেষ হওয়া মাত্র একটি সুরেলা কন্ঠের হাসি শুনতে পেলাম ঘরে। এবার আমি বেশ বুঝতে পারলাম আমার আগেই এঘরে কেউ আছে, যার হাসির শব্দ আমি বাইরে বসেও পেয়েছিলাম। বললাম- কে আপনি, এঘরটা আমি ভাড়া নিয়েছি আজ, আপনি কিভাবে এঘরে এলেন?
মেয়েলি কন্ঠ এবার আমায় যা বলল তা শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। মেয়েটি বলল, আমার নাম মৌসম। রামদীনকাকা লোকটা ভাল না। একবার কাকী দেশে গিয়েছিল। তখন রামদীনকাকা আমাকে এই বাড়ীতে রেপ করে মেরে পেছনের জঙ্গলে পুঁতে দেয়।তারপর থেকে আমি এখানেই থাকি। খুব ইচ্ছে করে কাকাকে মেরে ফেলতে। কিন্তু আমি সেটা করতে পারি না কারণ দেহধারণ করা খুব মুস্কিল আর মানুষ মারা আরো কঠিন।কিন্তু আমি এখন একজনকে ভালোবাসি। সে বলেছে আজ রাতেই ও কাকাকে শেষ করে দেবে। তারপর আমরা দুজন এখান থেকে চলে যাব অন্য কোনো খানে।
এতবড় একটা ভুতুড়ে গল্প শুনে আমি বুঝতেই পারছিলাম না এটা কি হচ্ছে আমার সাথে।আলো তখনো আসে নি। আমি বললাম, তুমি আজ রামদীনকে মেরে ফেললে দোষটা তো আমার ঘাড়ে এসে পড়বে। তুমি তোমার প্রেমিককে বলো দুদিন পর এসব করতে। এমন সময় ঘরের মধ্যে ভয়ংকর রকমের ঠান্ডা হাওয়া বইতে লাগলো। আমি খাটের উপর কম্বল মুড়ি দিয়েও ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলাম। একটা পুরুষ কন্ঠ এবার কথা বলে উঠল।
ছেলেটি প্রথমেই বলল, আমি মৌসমের বন্ধু। আপনি যদি কথা দেন যে আপনি কোনো পীরবাবার কাছে গিয়ে আমাদের আত্মার শান্তি লাভের ব্যবস্থা করবেন তাহলে আমিও আপনাকে কথা দেব যে আজ নয় আপনি চলে গেলেই শয়তান রামদীনকে শেষ করব। আমি কাঁপতে কাঁপতেই রাজী হয়ে গেলাম। ঘরের আলোটা জ্বলে উঠল আর শীতল বাতাসটাও স্বাভাবিক ঠান্ডায় ফিরে এল। একটু পরে দরজায় শব্দ শুনে দরজা খুলে দেখি রামদীন খিচুড়ি নিয়ে এসেছে। ঘরে আমার বৌ মেয়েকে রেখে এসেছি। রামদীনের দিকে তাকিয়ে রাগে ঘেন্নায় শরীরটা কেঁপে উঠল।নিজেকে কন্ট্রোল করে বললাম, খাব না কিছু, শরীরটা ভাল নেই, তুমি চলে যাও। চলে গেল রামদীন। দরজাটা বন্ধ করে জল খেয়ে নিলাম। গলায় শব্দ করে বললাম, মৌসম, আমি কাল ভোরেই এখান থেকে চলে যাব। তারপর পীরবাবার সন্ধান করে তোমাদের মুক্তির ব্যবস্থা করব। যে লোকটা তোমার জীবন নিয়ে খেলেছে তার হাতে আমি খেতে পারবো না। মৌসম তখন বলল, আপনার কথা শুনে খুব ভাল লাগল।আমার নাম মৌসম বানু আর আমার বন্ধুর নাম পারভেজ। আপনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব।আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন, ভয় নেই আমরা চট করে মানুষের অনিষ্ট করি না। ভালো থাকবেন। ভালোবাসা যেমন মানুষকে বাঁচতে সাহায্য করে তেমনি আপনার ভালোবাসা হয়ত আমাদের মুক্তির পথ হবে।ঘুমিয়ে পড়ুন আপনি নিশ্চিন্তে।
Comments
Post a Comment