ভালোবাসা তো এসেই যায়
বন্ধু তোর লাইগা রে
কলামে
সংযুক্তা
ভালোবাসা তো এসেই যায়
প্রায় এক বছর আমি বাইরের মানুষকে মুখ দেখাতে পারি নি, চাইও নি। আমার বাড়ীর সামনেই একজন অ্যাসিড বাল্ব ছুড়েছিল পলুদাকে লক্ষ্য করে। কিন্তু ঠিক সেসময়ই আমি পলুদাকে দেখে আনন্দে ওনার সামনে চলে এসে পড়ায় বাল্বটা আমার মুখে এসে লাগে। আমার মুখের একদিক পুরো ঝলসে গিয়েছিল। পলুদা একজন ভীষণ ভাল মনের মানুষ। কেউ বিপদে পড়লে পাড়ায় বেপাড়ায় পলুদা লোকজন নিয়ে গিয়ে কাজটা সেরে দেবেই ভালোভাবে। তাই পলুদা একদল মানুষের খুব প্রিয় আর যাদের কাজে উনি বাঁধা হয়ে দাঁড়ান তাদের দুচোখের বিষ।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলাম কিন্তু এমন কুৎসিত চেহারাটাকে লোকচক্ষুর সামনে আনতে পারি নি। তাই চাকরিটা ছাড়লাম। মা মেয়ে মিলে বাড়ীঘর বিক্রি করে চলে গেলাম ব্যাঙ্গালুরুতে। ভাড়া বাড়ীতে থেকে মা আমার চিকিৎসা করাতে লাগলেন। অনেক খরচ করে মুখের জিওগ্রাফি কিছুটা পাল্টানো গেলেও একটা চোখ নষ্টই রইলো।সানগ্লাস দিয়েই বিভৎসতাটা ঢাকছিলাম।আমায় যিনি প্লাস্টিক সার্জারি করছিলেন তিনি একটি অল্প বয়সী মেয়ে। আমার সাথে খুব ভাব হয়ে গিয়েছে। ওর নাম মুনিরা। আমায় সবসময় সাহস দেয়।
আজ মুনিরা ওর চোদ্দতলার ফ্ল্যাটে আমায় ডেকেছে - চা খেতে, কারণ মুনিরা এরপর কুয়েতে চলে যাবে, ওখানে ও একটি হাসপাতালে চাকরী পেয়ে গেছে। ওলা বুক করে হাজির হলাম, এই প্রথম আমি ওড়নাতে মুখ ঢাকি নি, তবে চোখ ঢাকা আছে সানগ্লাসে। মুনিরার বাড়ীতে পরিচয় হলো নূর আলমের সাথে, মুনিরার দাদা। মুনিরা ওর ঘরে নিয়ে আমায় বসালো। জানতে চাইল ওর দাদাকে কেমন লাগলো। আমি হেসে বললাম তোমার দাদা তো তোমার মতই ভাল মনে হলো গো। মুনিরা একটু চুপ থেকে বলল, দাদা তোমার কথা সব জানে, ও তোমাকে সাদী করতে চায়। তুমি আপত্তি কোরো না, আমি ছাড়া দাদার আর কেউ নেই। একজনকে ভালোবেসেছিল কিন্তু তাকে রক্ষা করতে পারে নি। মেয়েটিকে কলেজ থেকে ফেরার সময় তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয়। সাতদিন পর মেয়েটি মারা যায়। না, কারোর কোনো শাস্তি হয় নি। দাদাও আর বিয়ে করে নি। তুমি রাজী হয়ে যাও শবনম।
আমি জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম। খেয়ালও করিনি কখন মুনিরা ঘর ছেড়েছে আর ঘরে এসেছেন নূর। নূরের হাতে একটা লাল গোলাপ আর একটা কবিতার বই। আমি আপ্লুত, আমি নির্বাক। দুচোখ ভরা ভালোবাসা নিয়ে নূর আমায় বলল - আমার শ্রদ্ধা মিশ্রিত ভালোবাসা ভরা ছোট্ট উপহার। আমি দুহাত বাড়িয়ে নিলাম, আমার দুচোখ বেয়ে নেমে এসেছে জলের ধারা। জানালার সামনে আমরা দুজন গিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে বললাম - শরতের আকাশ কি সুন্দর। এমন সময় মুনিরা এলোআমার জন্য এককাপ কফি নিয়ে। নূরকে বাজার থেকে কিছু খাবার আনতে পাঠিয়ে নিজে রওনা দিল আমার মাকে আনতে। আমায় বলে গেল - এবার তোমার সংসার, তোমার ঘর, দুদিন বাদে তো সামলাতেই হবে, এখন বসে বসে কফি খাও আর কিভাবে বাড়ীঘর সাজাবে সে প্ল্যান করো, আমি আসছি মাকে নিয়ে।
ওরা দুজন বেড়িয়ে গেল।আমি এসে বসলাম ঐ ঘরে। কবিতার বইয়ের পাতা ওল্টাতে দেখি বেশ কয়েকজন কবির লেখার সংকলন।লেখকদের মধ্যে নূর আলমের নামও আছে। খুলে বসলাম কবিতাটি, হাতে আমার এখনো লাল গোলাপটি আর সামনে গরম কফির কাপ।
আমি তখন পড়ছি --
ভালোবাসা তো এসেই যায়, ভালোবাসার আর দোষ কি,
তোমার মত লড়াকু মেয়ে, চোখ ঢেকে চলে কি?
তোমায় যেদিন প্রথম দেখি, জানতে তুমি পারো নি,
ভালোবাসাটা জড়িয়ে গলা বলল - ওকে ভালোবাসো কি?
কলামে
সংযুক্তা
ভালোবাসা তো এসেই যায়
প্রায় এক বছর আমি বাইরের মানুষকে মুখ দেখাতে পারি নি, চাইও নি। আমার বাড়ীর সামনেই একজন অ্যাসিড বাল্ব ছুড়েছিল পলুদাকে লক্ষ্য করে। কিন্তু ঠিক সেসময়ই আমি পলুদাকে দেখে আনন্দে ওনার সামনে চলে এসে পড়ায় বাল্বটা আমার মুখে এসে লাগে। আমার মুখের একদিক পুরো ঝলসে গিয়েছিল। পলুদা একজন ভীষণ ভাল মনের মানুষ। কেউ বিপদে পড়লে পাড়ায় বেপাড়ায় পলুদা লোকজন নিয়ে গিয়ে কাজটা সেরে দেবেই ভালোভাবে। তাই পলুদা একদল মানুষের খুব প্রিয় আর যাদের কাজে উনি বাঁধা হয়ে দাঁড়ান তাদের দুচোখের বিষ।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলাম কিন্তু এমন কুৎসিত চেহারাটাকে লোকচক্ষুর সামনে আনতে পারি নি। তাই চাকরিটা ছাড়লাম। মা মেয়ে মিলে বাড়ীঘর বিক্রি করে চলে গেলাম ব্যাঙ্গালুরুতে। ভাড়া বাড়ীতে থেকে মা আমার চিকিৎসা করাতে লাগলেন। অনেক খরচ করে মুখের জিওগ্রাফি কিছুটা পাল্টানো গেলেও একটা চোখ নষ্টই রইলো।সানগ্লাস দিয়েই বিভৎসতাটা ঢাকছিলাম।আমায় যিনি প্লাস্টিক সার্জারি করছিলেন তিনি একটি অল্প বয়সী মেয়ে। আমার সাথে খুব ভাব হয়ে গিয়েছে। ওর নাম মুনিরা। আমায় সবসময় সাহস দেয়।
আজ মুনিরা ওর চোদ্দতলার ফ্ল্যাটে আমায় ডেকেছে - চা খেতে, কারণ মুনিরা এরপর কুয়েতে চলে যাবে, ওখানে ও একটি হাসপাতালে চাকরী পেয়ে গেছে। ওলা বুক করে হাজির হলাম, এই প্রথম আমি ওড়নাতে মুখ ঢাকি নি, তবে চোখ ঢাকা আছে সানগ্লাসে। মুনিরার বাড়ীতে পরিচয় হলো নূর আলমের সাথে, মুনিরার দাদা। মুনিরা ওর ঘরে নিয়ে আমায় বসালো। জানতে চাইল ওর দাদাকে কেমন লাগলো। আমি হেসে বললাম তোমার দাদা তো তোমার মতই ভাল মনে হলো গো। মুনিরা একটু চুপ থেকে বলল, দাদা তোমার কথা সব জানে, ও তোমাকে সাদী করতে চায়। তুমি আপত্তি কোরো না, আমি ছাড়া দাদার আর কেউ নেই। একজনকে ভালোবেসেছিল কিন্তু তাকে রক্ষা করতে পারে নি। মেয়েটিকে কলেজ থেকে ফেরার সময় তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয়। সাতদিন পর মেয়েটি মারা যায়। না, কারোর কোনো শাস্তি হয় নি। দাদাও আর বিয়ে করে নি। তুমি রাজী হয়ে যাও শবনম।
আমি জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম। খেয়ালও করিনি কখন মুনিরা ঘর ছেড়েছে আর ঘরে এসেছেন নূর। নূরের হাতে একটা লাল গোলাপ আর একটা কবিতার বই। আমি আপ্লুত, আমি নির্বাক। দুচোখ ভরা ভালোবাসা নিয়ে নূর আমায় বলল - আমার শ্রদ্ধা মিশ্রিত ভালোবাসা ভরা ছোট্ট উপহার। আমি দুহাত বাড়িয়ে নিলাম, আমার দুচোখ বেয়ে নেমে এসেছে জলের ধারা। জানালার সামনে আমরা দুজন গিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে বললাম - শরতের আকাশ কি সুন্দর। এমন সময় মুনিরা এলোআমার জন্য এককাপ কফি নিয়ে। নূরকে বাজার থেকে কিছু খাবার আনতে পাঠিয়ে নিজে রওনা দিল আমার মাকে আনতে। আমায় বলে গেল - এবার তোমার সংসার, তোমার ঘর, দুদিন বাদে তো সামলাতেই হবে, এখন বসে বসে কফি খাও আর কিভাবে বাড়ীঘর সাজাবে সে প্ল্যান করো, আমি আসছি মাকে নিয়ে।
ওরা দুজন বেড়িয়ে গেল।আমি এসে বসলাম ঐ ঘরে। কবিতার বইয়ের পাতা ওল্টাতে দেখি বেশ কয়েকজন কবির লেখার সংকলন।লেখকদের মধ্যে নূর আলমের নামও আছে। খুলে বসলাম কবিতাটি, হাতে আমার এখনো লাল গোলাপটি আর সামনে গরম কফির কাপ।
আমি তখন পড়ছি --
ভালোবাসা তো এসেই যায়, ভালোবাসার আর দোষ কি,
তোমার মত লড়াকু মেয়ে, চোখ ঢেকে চলে কি?
তোমায় যেদিন প্রথম দেখি, জানতে তুমি পারো নি,
ভালোবাসাটা জড়িয়ে গলা বলল - ওকে ভালোবাসো কি?
Comments
Post a Comment