ভালোবাসা
কলমে - সংযুক্তা
সত্যমঙ্গল প্রেমময় তুমি, ধ্রুব জ্যোতি তুমি অন্ধকারে।
তুমি সদা যার হৃদে বিরাজ, দুঃখ জ্বালা সেই পাসরে।।
নতুন বছরের শুরুতে কিছু বন্ধুর ইচ্ছেতে আজ আমিও নতুন পথে হাঁটতে শুরু করছি। তবে এমন দিনে কবিগুরুকে স্মরণ না করে কি করে চলবো, তাই কবির গান লিখেই শুরু করলাম আমার পথ চলা। আশাকরি সবার ভালোবাসায় এ পথ চলা সম্ভব হবে।
আজ যেহেতু এপথে প্রথম পদক্ষেপ রাখছি তাই একটা ছোট্ট গল্প বলছি।
ভালোবাসা
প্রয়াগে কুম্ভস্নানে হাজির কয়েকলক্ষ মানুষ ও বেশ কিছু অমানুষ। দূরদূরান্ত থেকে এসেছে সবাই। ট্রেন বা বাসে আসার পর সঙ্গমে যাওয়ার জন্য অটো, টোটো বা পা ভরসা। তবে এইসব যানও অনেকটা দূরেই দাঁড়িয়ে পড়ছে ভীড়ের চাপে। এক দম্পতি দুটি ছয় সাত বছরের মেয়ে আর কোলে একটি ছেলে নিয়ে স্টেশন থেকে একটি টোটো করে এসেছে সঙ্গমে। বেশ কিছুটা দূরে টোটোটা দাঁড়িয়ে পড়লো। দম্পতি কিছুক্ষণ নিজেদের মধ্যে কথা বলে ঠিক করল মেয়ে দুটিকে গাড়ীতে চালকের হেফাজতে রেখে কোলেরটাকে নিয়ে গিয়ে স্নান সেরে আসবে। টোটোচালক অবাক, এত ভীড়ে পরে কিভাবে খুঁজে পাবে ওনারা মেয়েদের! বেশ চিন্তার বিষয়। তখন ওরা টোটোচালকের ফোন নম্বর নিয়ে নিল আর একশোটা টাকা দিলো । কারণ বাচ্চা দুটোর খিদে পেতে পারে। টোটো চালককেও আলাদা সারাদিনের ভাড়া বাবদ অ্যাডভান্স পাঁচশো টাকা দিয়ে চলে গেল গঙ্গাস্নানের পূণ্য লাভ করতে। সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল কিন্তু সেই দম্পতি ফিরে এলো না। টোটোচালক তখন পুলিশের কাছে গেল। মেয়ে দুটি নিজেদের ও বাবার নাম বলল কিন্তু বাসস্থান কোথায় বলতে পারল না। মাইকে বার বার বলা হতে লাগল এদের কথা। টোটোচালককেও পুলিশ ছাড়ে নি। কিন্তু টোটোচালক স্থানীয় তাই রাতে ছাড়া পেল। একদিন দুদিন করে মেলা শেষ হয়ে গেল তবু ফিরল না সেই বাচ্চাসহ দম্পতি।
মেলা শেষ গৈরিকা এসে বসে মা গঙ্গার সামনে। চোখ বুজলেই চোখের সামনে দেখতে পায় ওর ছোট্ট ময়ূরীকে। গৈরিকার মেয়ে ময়ূরী এক অচেনা জ্বরে চলে গেছে মায়ের কোল ছেড়ে। এই গঙ্গার তীরে বসে থাকলেই গৈরিকা মেয়েকে অনুভব করতে পারে যেন। হঠাৎ একটা ঠেলা খেয়ে গৈরিকা চমকে উঠে তাকিয়ে দেখে ময়ূরীর বয়সী একটি রুগ্ন মেয়ে। ও তাড়াতাড়ি মেয়েটিকে নিয়ে যায় সামনের পুলিশ ক্যাম্পে। সেখানে যেতেই আরেকটি মেয়ে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে এই মেয়েটিকে। পুলিশের কাছে সব শুনে গৈরিকা মেয়ে দুটিকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু এভাবে তো তা সম্ভব নয়। তাই গৈরিকাকে পুলিশ স্টেশনে পরেরদিন যেতে বলা হয়। পরদিন গৈরিকা ওর স্বামীকে নিয়ে হাজির পুলিশ স্টেশনে। তারপর বেশ কটাদিন কাগজ তৈরী, দৌড়াদৌড়িতে কেটে যায়। সফল হয় ওদের মনোবাসনা। সেই বাবা মায়ের ফেলে দেওয়া মেয়েদুটিকে কোলে তুলে নেয় এই বাঙালী দম্পতি।
বাইশ বছর পার হয়ে গেছে। গৈরিকাদের দুই মেয়ে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। বাবা মা অন্ত প্রাণ মেয়েদুটির একটি আজ লন্ডনে যাবে বলে দমদম বিমানবন্দরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে বাবা মায়ের সাথে। অপর কন্যা বিমানবন্দরের ভেতরেই আছে কারণ সে একজন কাস্টমস অফিসার, যার বর্তমান পোষ্টিং এই বিমানবন্দরেই।
ভালোবাসতে জানতে হয়, মানুষকে ভালোবাসতে পারার মত শান্তি অন্য কিছুতে মেলে না। মেয়েদুটির ভাগ্যের জোরে ও গৈরিকাদের ভালোবাসায় আজ ওরা কত সুন্দর ভাবে এগিয়ে চলেছে জীবনপথে।
ভালোবাসাময় জীবনযাপন - এটাই হোক বছরের প্রথম দিনের সংকল্প।
সাইরাম
Comments
Post a Comment